Text Practice Mode
বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ; আমার ভালোবাসা
created Wednesday May 28, 04:27 by MdZubair1
0
559 words
0 completed
0
Rating visible after 3 or more votes
ভূমিকা:
বাংলাদেশ একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ও উন্নয়নশীল দেশ। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়, তা বাঙালির হাজার বছরের সংগ্রাম, আত্মত্যাগ এবং সাহসিকতার ফল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নদীমাতৃক ভূখণ্ড, উর্বর মাটি, চার ঋতুর বৈচিত্র্য ও সংস্কৃতির ঐতিহ্যে ভরপুর বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র। ভৌগোলিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকেও বাংলাদেশের গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই রচনায় আমরা বাংলাদেশের ইতিহাস, ভূগোল, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, সমস্যা ও সম্ভাবনার চিত্র তুলে ধরব।
মূল বিষয়বস্তু:
১. বাংলাদেশের ইতিহাস ও স্বাধীনতা সংগ্রাম:
বাংলাদেশের ইতিহাস অত্যন্ত গৌরবময়। হাজার বছর ধরে এই ভূখণ্ডে গড়ে উঠেছে নানা সভ্যতা ও রাজ্য। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের পর পাকিস্তানের অংশ হিসেবে জন্ম হয় পূর্ব পাকিস্তানের। কিন্তু ভাষা, সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে বাঙালিরা বারবার প্রতারিত হয়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল স্বাধীনতা অর্জনের মাইলফলক। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে।
২. ভূগোল ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য:
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি নদীমাতৃক দেশ। এর মোট আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার। পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমে পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরে আসাম এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। প্রধান নদীগুলোর মধ্যে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। চারটি ঋতুর মধ্যে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত পালাক্রমে আসে। এখানকার জলবায়ু সাধারণত উষ্ণ ও আর্দ্র। উর্বর মাটি ও প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে কৃষিকাজের জন্য উপযোগী এক ভূখণ্ড।
৩. অর্থনীতি ও কৃষিভিত্তিক জীবনধারা:
বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রধানত কৃষিনির্ভর হলেও এখন তা শিল্প, রপ্তানি ও সেবাখাতে বিস্তার লাভ করেছে। ধান, গম, পাট, আখ, সবজি, ফলমূল উৎপাদনে বাংলাদেশ যথেষ্ট দক্ষ। পাট একসময় সোনালী আঁশ হিসেবে খ্যাত ছিল। বর্তমানে তৈরি পোশাক শিল্প দেশের অর্থনীতির প্রধান রপ্তানি খাত। এছাড়া প্রবাসী আয় ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতও অর্থনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছে। তবে এখনও গ্রামীণ জনগণের জীবিকা কৃষির ওপর নির্ভরশীল।
৪. শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি:
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এই তিন স্তরে বিভক্ত। দেশব্যাপী হাজার হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। শিক্ষার হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি অনেক পুরোনো এবং সমৃদ্ধ। মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, হুমায়ুন আহমেদ প্রমুখ সাহিত্যিক বাংলা সাহিত্যে যুগান্তকারী অবদান রেখেছেন।
পহেলা বৈশাখ, নববর্ষ, ঈদ, পূজা ইত্যাদি ধর্মীয় ও জাতীয় উৎসব এখানে মিলেমিশে পালিত হয়। লোকসংগীত, নাচ, নাটক, পালাগান, বাউল গান বাংলাদেশের সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।
৫. প্রাকৃতিক সম্পদ ও পরিবেশ:
বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সম্পদে অতটা সমৃদ্ধ না হলেও, এর নদ-নদী, বনাঞ্চল, গ্যাসক্ষেত্র, সিলেটের পাথর ও চা-বাগান, রাঙ্গামাটির বাঁশ-কাঠ, সুন্দরবনের মধু ও কাঠ দেশের সম্পদ। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও নদীভাঙন দেশের অন্যতম সমস্যা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর ঝুঁকি ক্রমাগত বাড়ছে।
৬. সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ:
বাংলাদেশের অগ্রগতির পথে এখনো অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে। দারিদ্র্য, বেকারত্ব, দুর্নীতি, জনসংখ্যা বিস্ফোরণ, রাজনৈতিক অস্থিরতা, শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা, পরিবেশ দূষণ ইত্যাদি বড় সমস্যা। বিশেষ করে যুবসমাজের জন্য কর্মসংস্থান ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ।
৭. সম্ভাবনা ও উন্নয়নের ধারা:
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। জাতিসংঘের এলডিসি (LDC) থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের সুপারিশ ইতিমধ্যেই মিলেছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি, ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি ইত্যাদি উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে বা হচ্ছে। জনশক্তি, কৃষি, শিল্প, নারী উদ্যোক্তা, তথ্যপ্রযুক্তি খাত দেশের সম্ভাবনাময় দিক।
উপসংহার:
বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় ও উদীয়মান জাতি। নানা সংকট ও প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের জনগণ অদম্য সাহস, সংগ্রাম ও শ্রম দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছে। একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে সুশাসন, দক্ষ নেতৃত্ব, এবং জনগণের সচেতন অংশগ্রহণ অত্যন্ত প্রয়োজন। আমাদের প্রত্যাশা, অচিরেই বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের কাতারে জায়গা করে নেবে এবং একটি গর্বিত জাতি হিসেবে বিশ্বে পরিচিত হবে।
saving score / loading statistics ...
00:00
ভূমিকা:
বাংলাদেশ একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ও উন্নয়নশীল দেশ। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়, তা বাঙালির হাজার বছরের সংগ্রাম, আত্মত্যাগ এবং সাহসিকতার ফল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নদীমাতৃক ভূখণ্ড, উর্বর মাটি, চার ঋতুর বৈচিত্র্য ও সংস্কৃতির ঐতিহ্যে ভরপুর বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র। ভৌগোলিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকেও বাংলাদেশের গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই রচনায় আমরা বাংলাদেশের ইতিহাস, ভূগোল, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, সমস্যা ও সম্ভাবনার চিত্র তুলে ধরব।
মূল বিষয়বস্তু:
১. বাংলাদেশের ইতিহাস ও স্বাধীনতা সংগ্রাম:
বাংলাদেশের ইতিহাস অত্যন্ত গৌরবময়। হাজার বছর ধরে এই ভূখণ্ডে গড়ে উঠেছে নানা সভ্যতা ও রাজ্য। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের পর পাকিস্তানের অংশ হিসেবে জন্ম হয় পূর্ব পাকিস্তানের। কিন্তু ভাষা, সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে বাঙালিরা বারবার প্রতারিত হয়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল স্বাধীনতা অর্জনের মাইলফলক। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে।
২. ভূগোল ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য:
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি নদীমাতৃক দেশ। এর মোট আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার। পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমে পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরে আসাম এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। প্রধান নদীগুলোর মধ্যে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। চারটি ঋতুর মধ্যে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত পালাক্রমে আসে। এখানকার জলবায়ু সাধারণত উষ্ণ ও আর্দ্র। উর্বর মাটি ও প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে কৃষিকাজের জন্য উপযোগী এক ভূখণ্ড।
৩. অর্থনীতি ও কৃষিভিত্তিক জীবনধারা:
বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রধানত কৃষিনির্ভর হলেও এখন তা শিল্প, রপ্তানি ও সেবাখাতে বিস্তার লাভ করেছে। ধান, গম, পাট, আখ, সবজি, ফলমূল উৎপাদনে বাংলাদেশ যথেষ্ট দক্ষ। পাট একসময় সোনালী আঁশ হিসেবে খ্যাত ছিল। বর্তমানে তৈরি পোশাক শিল্প দেশের অর্থনীতির প্রধান রপ্তানি খাত। এছাড়া প্রবাসী আয় ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতও অর্থনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছে। তবে এখনও গ্রামীণ জনগণের জীবিকা কৃষির ওপর নির্ভরশীল।
৪. শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি:
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এই তিন স্তরে বিভক্ত। দেশব্যাপী হাজার হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। শিক্ষার হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি অনেক পুরোনো এবং সমৃদ্ধ। মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, হুমায়ুন আহমেদ প্রমুখ সাহিত্যিক বাংলা সাহিত্যে যুগান্তকারী অবদান রেখেছেন।
পহেলা বৈশাখ, নববর্ষ, ঈদ, পূজা ইত্যাদি ধর্মীয় ও জাতীয় উৎসব এখানে মিলেমিশে পালিত হয়। লোকসংগীত, নাচ, নাটক, পালাগান, বাউল গান বাংলাদেশের সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।
৫. প্রাকৃতিক সম্পদ ও পরিবেশ:
বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সম্পদে অতটা সমৃদ্ধ না হলেও, এর নদ-নদী, বনাঞ্চল, গ্যাসক্ষেত্র, সিলেটের পাথর ও চা-বাগান, রাঙ্গামাটির বাঁশ-কাঠ, সুন্দরবনের মধু ও কাঠ দেশের সম্পদ। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও নদীভাঙন দেশের অন্যতম সমস্যা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর ঝুঁকি ক্রমাগত বাড়ছে।
৬. সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ:
বাংলাদেশের অগ্রগতির পথে এখনো অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে। দারিদ্র্য, বেকারত্ব, দুর্নীতি, জনসংখ্যা বিস্ফোরণ, রাজনৈতিক অস্থিরতা, শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা, পরিবেশ দূষণ ইত্যাদি বড় সমস্যা। বিশেষ করে যুবসমাজের জন্য কর্মসংস্থান ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ।
৭. সম্ভাবনা ও উন্নয়নের ধারা:
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। জাতিসংঘের এলডিসি (LDC) থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের সুপারিশ ইতিমধ্যেই মিলেছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি, ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি ইত্যাদি উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে বা হচ্ছে। জনশক্তি, কৃষি, শিল্প, নারী উদ্যোক্তা, তথ্যপ্রযুক্তি খাত দেশের সম্ভাবনাময় দিক।
উপসংহার:
বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় ও উদীয়মান জাতি। নানা সংকট ও প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের জনগণ অদম্য সাহস, সংগ্রাম ও শ্রম দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছে। একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে সুশাসন, দক্ষ নেতৃত্ব, এবং জনগণের সচেতন অংশগ্রহণ অত্যন্ত প্রয়োজন। আমাদের প্রত্যাশা, অচিরেই বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের কাতারে জায়গা করে নেবে এবং একটি গর্বিত জাতি হিসেবে বিশ্বে পরিচিত হবে।
