eng
competition

Text Practice Mode

বাংলা টাইপিং প্রাকটিস

created Jun 13th 2023, 16:30 by Rownok Shahriar


2


Rating

1130 words
3 completed
00:00
আমাদের দেশে বিজ্ঞান-লেখার দরকার কেন বা কী কী প্রয়োজনে আমাদের বিজ্ঞান-লেখক বাড়াতে হবে কিংবা কীভাবে বিজ্ঞান-লেখক হওয়া যায়, এসব নিয়েই আজকে লিখব। আমার উদ্দীষ্ট পাঠক-পাঠিকার বয়স ১২ থেকে ১৮ বছরের কাচ্চাবাচ্চা, যারা আগামী দিনে কলম হাতে কলম তুলে নিতে ইচ্ছুক। লেখা তরুণ-তরুণীদেরও কাজে লাগবে বলেই আমার বিশ্বাস।
 
কেন তুমি বিজ্ঞান নিয়ে লিখবে, অথবা বিজ্ঞান-লেখার দরকার কেন প্রশ্নের উত্তরে আমি নিচে একটি তালিকা দিচ্ছি। যদি তুমি মনে করো, এগুলো করা দরকার বা থাকা দরকার, তাহলেই বিজ্ঞান-লেখার প্রয়োজন আছে বলে মানতে হবে। যদি (তুমি মনে করো)-
 
তুমি দেশকে ভালোবাসো
তুমি দেশের উন্নতি চাও
তুমি দেশকে শীঘ্রই মধ্য-আয়ের দেশে উন্নীত করতে চাও, এবং অচিরেই উন্নত দেশের তালিকায় নিয়ে যেতে চাও
তুমি দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাও, তাদের দুর্দশা ঘুচিয়ে দিয়ে [আমাদের দেশে অনেকেই আছে যারা সুখের বুদ্বুদে বাস করে মনে করে বেহেশতি শান্তিতে আছে, অনেকে ফাটকা লাভকেই চূড়ান্ত সুখ মনে করে, অনেকেই স্বল্পমেয়াদী সুখে আত্মহারা হয়ে যায়, দীর্ঘমেয়াদের দুঃখ তারা দেখতেও চায় না, ভাবতেও চায় না, যদি তুমি এদের মতো না হও]
সমাজের অনিয়ম, দুর্নীতি আর কুসংস্কার তুমি দূর করতে চাও
তুমি দেশকে আলো ঝলমলে, শস্য-শ্যামল এবং শিক্ষাদীক্ষায় উন্নত রাখতে চাও
তুমি অন্ধকারে আলো ফোটাতে চাও
তুমি ফেসবুকে বিদেশী বন্ধু-বান্ধবীর সামনে বড়াই করতে চাও
সর্বোপরি, যদি তুমি ফেসবুকে থাকতে চাও
যদি তুমি এগুলো করতে চাও, তাহলে তোমার বিজ্ঞান-লেখার দরকার আছে। হয় তোমাকে বিজ্ঞান-লেখা পড়তে হবে, নয়ত বিজ্ঞান নিয়ে লিখতে হবে।
 
উপরে নিচে আমি একটা কারণ দেখিয়েছি যে, তুমি যদি ফেসবুকে যুক্ত থাকতে চাও, তাহলে তোমার বিজ্ঞান-লেখার প্রয়োজন আছে। নিশ্চয়ই অনেকেই তোমরা হাসছ! ফেসবুকে থাকতে বিজ্ঞান লিখতে হয় নাকি? অনেকেই বিজ্ঞানের ‘অ খ’ না জেনেই ফেসবুকে করছে! কিন্তু তুমি কি জান ফেসবুকে যুক্ত থাকতে তোমার কী কী ডিভাইস প্রয়োজন? একটু হিসাব কর। প্রথমে একটি ল্যাপটপ দরকার। কিন্তু শুধু ল্যাপটপ থাকলেই হয় না, একটা মোডেম লাগে, একটি কম খরচার ইন্টারনেট কানেকশন লাগে, একটি ইন্টারনেট প্রোভাইডার লাগে, ইন্টারনেট গেইটওয়ে দরকার, সাবমেরিন ফাইবার অপটিক কেবল দরকার, ওয়ারলেস বা ফাইবার-অপটিকের নেটওয়ার্ক অপারেটর দরকার, কন্টেন্ট প্রোভাইডার দরকার। আরো কত কী যে লাগে! তবেই তোমার ক্রোড়ারোহী ল্যাপটপে ঝাঁ চকচকে প্রোফাইল উড়ে এসে জুড়ে বসছে। এতোসব নাম বললাম এগুলো সবই আধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তির অবদান। এতে হাজার হাজার এঞ্জিনিয়ার কাজ করছে। বিজ্ঞান না জানলে এতোসব চালানো সম্ভব হতো? আমি আমার অন্য একটি লেখায় লিখেছি,
 
“বিজ্ঞান-সংস্কৃতি মানুষকে একটি উচ্চতম রুচিশীলতা দান করে। স্বভাবতই এটা সামাজিক কদর্যতার বিপরীতে এক সুস্থ পরিশীলিত জীবনের কথা বলে। অবশ্যই এটা শুধু ব্যক্তি-জীবনেই সীমাবদ্ধ নয়, এতে সামাজিক জীবনের একটা গড় হিসাবের কথা বোঝানো হয়েছে। বিজ্ঞান-সংস্কৃতি আয়ত্তে এলেই সব রাহাজানি রক্তপাত, লোভ পঞ্চ ম-কার লোপ পাবে, তা নয়। আশা করা যায়, পুরো সমাজ জীবনে একটি স্থিতিশীলতা আসবে। এখন যেমন আমরা এক অস্থির সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের এই সামাজিক অস্থিরতার পেছনে এটা বড় কারণ কিন্তু নেপথ্যের বিজ্ঞান প্রযুক্তি। এই বিজ্ঞান প্রযুক্তি অবশ্যই এসেছে ‘পশ্চিম’ থেকে, কিংবা বলা যায় উন্নত দেশ থেকে। কিন্তু আমাদের শাপলা-শালুক আর হিজল-তমাল এবং বিল-হাওর আর জলাশয়ের দেশের স্বাভাবিক বিজ্ঞান-বিমুখতার কারণে আমরা প্রযুক্তিটা ব্যবহার করছি মাত্র। এর পেছনে যে বিজ্ঞান থাকে, সেটা আমরা জানিই না। যে সমাজ একটি মুঠোফোন তৈরি করে রপ্তানি করে আর যে সমাজ শুধু মুঠোফোনটি আমদানী করে ব্যবহার কওে, দুইয়ের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য থাকে। এই পার্থক্যটাই বিজ্ঞান-সংস্কৃতি।”
 
‘বিজ্ঞান-সংস্কৃতি’ বলতে আমি বিজ্ঞান প্রযুক্তির জ্ঞানসমৃদ্ধ একটি সমাজ বোঝাতে চেয়েছি। ভেবে দেখ, আমরা নয় কোটি মুঠোফোন সেট ব্যবহার করছি, কিন্তু মুঠোফোনটি আমরা বানাতে পারি না। কেন পারি না জান? কারণ আমাদের সংস্কৃতিতে যতখানি গান আর কবিতা, ম্যানেজমেন্ট আর কর্পোরেট আছে, ততোখানি বিজ্ঞান-লেখক নেই। সমাজে বিজ্ঞান-লেখা না থাকলে বিজ্ঞান প্রযুক্তি সম্পর্কে খবরাখবর জানানোর কোনো উপায়ই থাকে না। বিজ্ঞান-লেখা লিখতে তো বিজ্ঞান-লেখকই লাগবে, তাই না! এজন্যই বলছি বিজ্ঞান-লেখার লেখকের খুব প্রয়োজন আমাদের দেশে।
 
বিদেশে একসময়ে বিজ্ঞান নিয়ে জনপ্রিয় ধাচের লেখাকে খুব খাটো করে দেখা হতো। এমন একটি মধ্যযুগীয় ভাবনা ছিল যে বিজ্ঞানী থাকবেন বড় ল্যাবরেটরি বা সুউচ্চ মিনারে বা প্রাসাদের সবচেয়ে নিভৃত কক্ষে। প্রায়ান্ধকার সেই ঘরে মৃদু আলোতে বিজ্ঞানী বা পণ্ডিত পড়াশোনা বা লেখাজোকা করবেন। এই আইডিয়াটা এসেছে মধ্যযুগের ইউরোপ থেকে। সেখানে তখন বিজ্ঞানীদের ল্যাবরেটরি বলতে রাজ প্রাসাদেরই কোনো এক অংশ বোঝানো হতো। এইরকম একটা ছবির সবচেয়ে সার্থক প্রবক্তা ছিলেন সম্ভবত টাইকো ব্রাহে।
 
জ্যোতির্বিদ্যার রাজপুত্র টাইকোকে একটা সম্পূর্ণ দ্বীপ দান করা হয়েছিল আকাশ পর্যবেক্ষণের জন্য। সেই দ্বীপে টাইকো উরানিবর্গ নামের এক বড় প্রাসাদ নির্মাণ করেন। এই প্রাসাদেই তিনি বাস করতেন, আড্ডা দিতেন, রাজকীয় কাজের আয়োজন করতেন, জ্যোতির্বিদ্যার গবেষণা করতেন, লাইব্রেরি গড়েছিলেন। এখানে বসেই তিনি গ্রহ-নক্ষত্রের পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যবেক্ষণ করেছেন। সেসব পর্যবেক্ষণকেই তো পরে কাজে লাগিয়ে কেপলার তাঁর গ্রহগতির সূত্র দিলেন। তো টাইকোর এই প্রাসাদই যেন বিজ্ঞানীর একটি সিম্বল হয়ে গেল। সত্যজিৎ রায়ের ‘গুগাবাবা’ ছবিতেও আমরা দেখি ‘বরফি’ নামের যাদুকর মতান্তরে বিজ্ঞানীর মিনারবাসী চরিত্র। বিজ্ঞান আর ম্যাজিক যে একসময়ে খুব কাছাকাছি ছিল সেটিও তো এখন আমাদের জানা। সত্যজিতের ‘হীরক রাজার দেশে’র ছবিতে দেখনি কীভাবে ‘যন্তর-মন্তরে’ ঢুকিয়ে মানুষের মগজ-ধোলাই করত! সেতো যন্ত্রই, তাই না!
 
যা-বলছিলাম, বিজ্ঞানকে গজদন্ত মিনার থেকে টেনে সাধারণ বাষায় প্রকাশ শুরু করেন লর্ড কেলভিন, সেই ভিক্টোরিয়ান যুগের বিলেতে। ফ্যারাডেও যেন একই ধাঁচে গড়া। আর তখনও মহাদেশীয় ইউরোপে কিন্তু বিজ্ঞান গজদন্তমিনারবাসীই ছিল। সেখানে কঠিন কঠিন শব্দ দুরূহ গণিতের চক্করেই বিজ্ঞান খাবি খেত। ইংরেজ আগমনের পর আমাদের দেশে যখন বাংলা গদ্যের বিকাশ আরম্ভ হয়, তখন থেকেই আমাদের বিজ্ঞান-লেখা শুরু হয়। শুরুর দিকের অনেক গদ্যই বিজ্ঞান-লেখনী ছিল। অক্ষয়কুমার দত্ত, রাজশেখর বসু, জগদীশচন্দু বসু এঁরা আমাদের প্রাতঃস্মরণীয় বিজ্ঞান-লেখক। তোমাদের একটা মজার তথ্য দিই, রবীন্দ্রনাথের লেখা প্রথম প্রবন্ধটি ছিল কিন্তু বিজ্ঞানের। প্রবন্ধটির নাম ছিল ‘গ্রহগণ জীবের আবাস’। রবীন্দ্রনাথ মস্ত বড় কবি হওয়া সত্ত্বেও তিনি একজন প্রথম শ্রেণির বিজ্ঞান-লেখকও ছিলেন। তাঁর লেখা বিজ্ঞানের বইটির নাম হলো ‘বিশ্বপরিচয়’।
 
রবীন্দ্রনাথ বিজ্ঞান নিয়ে লিখেছিলেন বলে তোমাকেও যে বিজ্ঞান নিয়ে লিখতে হবে, তা নয়। কিন্তু প্রথমদিকে যেসব কারণ আমি বলেছি তার একটিমাত্র উদ্দেশ্যও যদি তোমার থাকে তাহলেই তুমি বিজ্ঞান-লেখায় মন দেবে। বিজ্ঞান নিয়ে লিখে বিজ্ঞানের বিষয়-আসয় মানুষের মুখের ভাষার কাছাকাছি ভাষায় লিখলে তারা বিজ্ঞান ভালো বুঝতে পারবে। সমাজ একটু উঁচুমানে পৌঁছবে, আমরা বিজ্ঞানী তৈরি করতে পারব। আমাদের নিজেদের বিজ্ঞানীরাই তখন আমাদের দেশীয় প্রযুক্তিতে মুঠোফোন বানাতে পারবে। এটা সত্যি হলে তখন তুমি ফেসবুকে বড়াই করে বলতে পারবে, ‘আমরা মুঠোফোন বানাই, মেড ইন বাংলাদেশ’।
 
কিন্তু আমি কেমন বিজ্ঞান-লেখার কথা বলছি? স্বাদু গদ্যে মজাদার ভাষায় বিজ্ঞানের গহন সৌন্দর্যের বর্ণনার কথা বলছি। বলছি জনপ্রিয় কিংবা আধা-জনপ্রিয় বিজ্ঞান। যখনই ‘বিজ্ঞান-লেখা’ বলব, ধরে নিতে হবে আমি বোঝাচ্ছি ‘জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখনী’; এটা বিজ্ঞান-সংবাদ থেকে আলাদা কিংবা পেশাদার বৈজ্ঞানিক জার্নাল বা গবেষণাপত্র থেকে আলাদা। গবেষণাপত্র বা যাকে বলে বিজ্ঞান-পেপার, সেটা একেবারে ভিন্ন এক জিনিস। এধরনের পেপার খুব বিশেষ প্রকৃতির হয়, বিশেষ শাখার বিশেষভাবে দক্ষতাপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী ছাড়া সেসব পেপার কেউ কিছু বোঝে না। তার কারণ গবেষণাপত্রের ভাষা সেভাবেই উদ্দীষ্ট ব্যক্তির জন্য নির্দিষ্ট করা থাকে। মেডিকেল সায়েন্সের সায়েন্টিফিক পেপার আমি বুঝব না। আবার আমার পেপার ইংরেজির শিক্ষক বুঝবে না। এমনকি একই শাখার মধ্যে বিভিন্ন উপশাখা আছে, যাদের একজনের পেপার অন্যজন কিছুই বোঝে না। আমার বন্ধু ড. শেখ ফাত্তাহ এবং আমি একই তড়িৎ কৌশলের ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও আমরা একে অপরের পেপার বুঝব না, কেবল কিছু কমন শব্দ ছাড়া। কিন্তু এইসব শাখার লেখা যদি আধা-জনপ্রিয় আধা-টেকনিক্যাল কিংবা জনপ্রিয় ধাঁচে লেখা হতো, তাহলে সকলেই সকলের লেখা বুঝত। সেটা কেন হয় না? জনপ্রিয় লেখার একটা সীমাবদ্ধতা আছে যেটা পেশাদার বৈজ্ঞানিক পেপারের নেই। এরকম আরো কারণ আছে। অতো বিশদে না গিয়ে বরঞ্চ আমরা জনপ্রিয় বিজ্ঞানেই থাকি।

saving score / loading statistics ...