Text Practice Mode
মাসুদের মতো করোনাও কি ভালো হইবে না?( প্রথম আলো, সঞ্জয় সরকার)
created Jul 13th 2021, 10:01 by Asfar Uddin
1
762 words
            4 completed
        
	
	0
	
	Rating visible after 3 or more votes	
	
		
		
			
				
					
				
					
					
						
                        					
				
			
			
				
			
			
	
		
		
		
		
		
	
	
		
		
		
		
		
	
            
            
            
            
			 saving score / loading statistics ...
 saving score / loading statistics ...
			
				
	
    00:00
				বালকদিগের সরদার ফটিক চক্রবর্তীর মাথায় একটা নতুন ভাবোদয় হইল; তাহাকে বিবিএ পড়িতে হইবে। এমন সময় কুবের সার্ভিসের একটি নৌকা ঘাটে আসিয়া লাগিল। কাঁচা গোঁফ এবং কলপ করা চুলের অর্ধবয়সী এক ভদ্রলোক ডাঙায় উঠিয়া আসিলেন। ফটিককে সুধাইলেন, ‘চক্রবর্তীদের বাড়ি কোথায়?’ 
 
ফটিক মেসেঞ্জারে চ্যাট করিতেছিল। রিপ্লাই দিতে দিতে কহিল, ‘কাইন্ডলি গুগল ম্যাপে সার্চ করুন।’
 
ভদ্রলোক কহিলেন, ‘বাবা, আমি তো স্মার্টফোনের কিছু বুঝি না। খালি ফোন রিসিভ করি আর মানুষদিগকে ফোন করি।’
 
ফটিক বিরক্ত হইয়া কহিল, ‘তাহা হইলে আর কী! গুগল মহাশয়কে ফোন করিয়া রাস্তা চিনিয়া নিন।’
 
২.
বিদায় লইবার দু–এক দিন পূর্বে বিশ্বম্ভর বাবু তাহার ভগিনীর কাছে ছেলেদের পড়াশোনা সম্বন্ধে প্রশ্ন করিলেন। উত্তরে শুনিলেন, ফটিক বিবিএ পড়িতে চায়। বিশ্বম্ভর বাবু অসম্ভব খুশি হইয়া ফটিকের মাথায় হস্ত বুলাইয়া কহিলেন, ‘তুমি একেবারে রাইট ডিসিশন লইয়াছ। এই যুগে বিবিএ ছাড়া কোনো আলাপ নাই। বিবিএ ফিট তো তুমি হিট। পড়ালেখা সমাপ্ত হইবার সঙ্গে সঙ্গে চাকরি। স্টার্টিং স্যালারি ফিফটি প্লাস।’
 
বিশ্বম্ভর বাবুর ভগিনী কহিলেন, ‘কিন্তু দাদা, ফটিককে তো ভালো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িতে হইবে।’
 
বিশ্বম্ভর বাবু অভয় দিয়া কহিলেন, ‘সে ব্যবস্থাদি আমি করিব। শহরে লইয়া গিয়া নামকরা এক কোচিং সেন্টারে ভর্তি করাইয়া দিব। কোচিংয়ের ভাইয়াদের আদেশ মান্য করিলেই সে বিবিএ পড়ার গৌরব অর্জন করিবে।’
 
সেই হইতে ‘কবে যাব কখন যাব’ করিয়া ফটিক তাহার মামাকে অস্থির করিয়া তুলিল। উৎসাহে তাহার রাত্রে নিদ্রা হয় না। কখন যে ‘ট্রাভেলিং টু ঢাকা’ স্ট্যাটাস দিবে!
৩.
ফটিক মামার সহিত ঢাকায় আসিয়া কোচিং সেন্টারে ভর্তি হইল। কোচিংয়ের ভাইয়ার লেকচার মন্ত্রমুগ্ধ হইয়া শুনিল। ভাইয়া কহিলেন, ‘শোনো, তোমাদিগের হাতে দুইখানা অপশন। চার মাস পরিশ্রম করিবে নাকি চার বছর? এই চার মাস পরিশ্রম করিয়া মনোযোগসহকারে পড়ালেখা করো। দেখিবে, আগামী চার বছর রাজার হালে থাকিতে পারিবে। কোনো কষ্ট করিতে হইবে না। জাস্ট পরীক্ষার আগের রাতে শিট ফটোকপি করিয়া পরীক্ষায় বসিবে। বাকি সময় তোমার। আড্ডা-গান-মাস্তিতে ভরপুর জিংগালালা লাইফ।’
ফটিকের চোখে রঙিন ভবিষ্যতের স্বপ্ন। যেকোনো মূল্যে তাহাকে চান্স পাইতেই হইবে। তাই দরজা-জানালা বন্ধ করিয়া পড়ালেখায় মনোনিবেশ করিল। লাগিয়া থাকিলে কী না হয়! অবশেষে সে সত্যি সত্যিই বিবিএতে চান্স পাইয়া গেল। ফটিক ‘ইয়ো ব্রো, আই মেড ইট। ডিয়ার বিবিএ, আই অ্যাম কামিং টু উইন ইউ!’ ক্যাপশন লিখিয়া ফেসবুকে একখানা সেলফি আপলোড করিল।
৪.
এক মাস ক্লাস করিতে না করিতেই ফটিকের মাথায় হাত। স্যার কহিলেন, ‘আগামী সপ্তাহে তোমাদিগের ফার্স্ট মিড।’
 
এ কেমন বিচার! এমন তো কথা ছিল না! আরও কয়েক দিন যাওয়ার পর ফটিক বুঝিতে পারিল, উহা ট্রেইলার ছিল। ঘটনা এখনো আরম্ভই হয় নাই। এক ক্লাসে ফার্স্ট মিডের ঘোষণা আসে তো পরের ক্লাসে অ্যাসাইনমেন্ট। তারপরের ক্লাসে প্রেজেন্টেশন। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো দেয় সারপ্রাইজ অফার আর টিচাররা দেন সারপ্রাইজ টেস্ট! এবং ফটিক আরও আশ্চর্য হইল, যখন শুনিল যে ক্লাসে উপস্থিতির উপরও নম্বর আছে! অথচ সে শুনিয়াছিল, ভার্সিটিতে নাকি ক্লাসই করিতে হয় না।
 
মিডটার্ম, অ্যাসাইনমেন্ট এবং প্রেজেন্টেশনের প্যারায় ফটিক ধরাশায়ী। মিডটার্মের সিলেবাস এত বড় হইতে পারে, তাহা সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না।
 
এক কোর্সের মিডটার্মের জন্য সারারাত পড়ালেখা করিল ফটিক। সকালে বুঝিতে পারিল, তাহার শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়া গিয়াছে। অর্থাৎ জ্বর আসিয়াছে। স্যারের নিকট গিয়া ফটিক কহিল, ‘স্যার, জ্বর আসিয়াছে।’
 
স্যার কহিলেন, ‘ও কোনো ব্যাপার নহে। ভার্সিটিতে পরীক্ষার দিন সকালে এমনিতে শরীর গরম গরম অনুভূত হইয়া থাকে। পরীক্ষায় বসো। সারিয়া উঠিবে।’
৫.
স্যুটেড-বুটেড হয়ে প্রেজেন্টেশন দেওয়া, মিডটার্ম আর হাজারো অ্যাসাইনমেন্টের ভিড়ে ফটিকের মুক্ত হৃদয় আবদ্ধ হইয়া পড়িল। তাহার খুব করিয়া গ্রাম আর মায়ের কথা মনে পড়িল। আর ভাবিতে লাগিল, কবে ছুটি হইবে। ‘কবে ছুটি হবে’ স্ট্যাটাস দিয়া সে ফেসবুক ভরাইয়া ফেলিল। তাহার ছুটি চাই–ই চাই। তাহার মাকে দেখিতে যাইতেই হইবে।
 
অবশেষে ফটিক বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ পাইল। করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। ক্লাসও হইবে না। প্রথম সপ্তাহে ফটিক পাঙ্খা হইয়া গেল। ঘুম, খাওয়াদাওয়া আর ফেসবুকিং করিয়া সময় বেশ কাটিতে লাগিল। তবে একটাই সমস্যা, বাড়ির বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নাই। চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী। এইভাবে কয়েক দিন কাটিয়া গেলে ফটিক উসখুস করিতে শুরু করিল। তাহার আর কিছু ভালো লাগে না। এত সুখ, এত আরাম যেন বিষ! চুল–দাড়ি রবীন্দ্রনাথের মতো হইয়া যাইতেছে। বাড়িতে আর তাহার কিছুতেই মন বসে না। শুইয়া-বসিয়া থাকিতে থাকিতে মনে হইতেছে, তাহার পায়ে শিকড় গজাইয়া যাইতেছে। নিজের মাথাটা নিজেই ফাটাইয়া ফেলিতে মন চাইতেছে। নেট কিনিতে কিনিতে তাহার জমানো টাকাপয়সাও সব শেষ হইয়া গেল। ফটিকের মনে হইতেছে, করোনা হওয়া লাগিবে না, সে এমনিতেই শ্বাস বন্ধ হইয়া মৃত্যুবরণ করিবে।
৬.
মাঝেমধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলিবার ঘোষণা আসে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলিবার সময় নিকটে আসিলে করোনার সংক্রমণ বাড়িয়া যায়। সংক্রমণ খানিকটা কমিয়া যায়, আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলিবার ঘোষণা আসে। আবার সংক্রমণ বাড়িয়া যায়। এই চক্র হইতে কি সে বাহির হইতে পারিবে না? করোনা কি জনৈক মাসুদের মতো; যে আর কোনোদিনও ভালো হইবে না বলিয়া পণ করিয়াছে?
 
এইসব ভাবিতে ভাবিতে ফটিক একদিন মাথা ঘুরিয়া পড়িয়া গেল। ফটিকের মা ঝড়ের বেগে ঘরে প্রবেশ করিলেন। ফটিকের শিয়রে বসিয়া ডাকিলেন, ‘ও রে ফটিক, বাপধন রে!’
 
ফটিক কাহাকেও লক্ষ না করিয়া বিড়বিড় করিয়া প্রলাপ বকিতে লাগিল, ‘হ্যালো এভরিওয়ান, গুড মর্নিং...ইটস মি, ফটিক চক্রবর্তী, বিয়ারিং আইডি ৩৬...প্রেজেন্টিং...অ্যাঁ...মা, ভার্সিটির ছুটি কবে শেষ হইবে, মা? আমি ভার্সিটিতে যাইব, মা...!’
 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ গল্প অবলম্বনে
			
			
	        ফটিক মেসেঞ্জারে চ্যাট করিতেছিল। রিপ্লাই দিতে দিতে কহিল, ‘কাইন্ডলি গুগল ম্যাপে সার্চ করুন।’
ভদ্রলোক কহিলেন, ‘বাবা, আমি তো স্মার্টফোনের কিছু বুঝি না। খালি ফোন রিসিভ করি আর মানুষদিগকে ফোন করি।’
ফটিক বিরক্ত হইয়া কহিল, ‘তাহা হইলে আর কী! গুগল মহাশয়কে ফোন করিয়া রাস্তা চিনিয়া নিন।’
২.
বিদায় লইবার দু–এক দিন পূর্বে বিশ্বম্ভর বাবু তাহার ভগিনীর কাছে ছেলেদের পড়াশোনা সম্বন্ধে প্রশ্ন করিলেন। উত্তরে শুনিলেন, ফটিক বিবিএ পড়িতে চায়। বিশ্বম্ভর বাবু অসম্ভব খুশি হইয়া ফটিকের মাথায় হস্ত বুলাইয়া কহিলেন, ‘তুমি একেবারে রাইট ডিসিশন লইয়াছ। এই যুগে বিবিএ ছাড়া কোনো আলাপ নাই। বিবিএ ফিট তো তুমি হিট। পড়ালেখা সমাপ্ত হইবার সঙ্গে সঙ্গে চাকরি। স্টার্টিং স্যালারি ফিফটি প্লাস।’
বিশ্বম্ভর বাবুর ভগিনী কহিলেন, ‘কিন্তু দাদা, ফটিককে তো ভালো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িতে হইবে।’
বিশ্বম্ভর বাবু অভয় দিয়া কহিলেন, ‘সে ব্যবস্থাদি আমি করিব। শহরে লইয়া গিয়া নামকরা এক কোচিং সেন্টারে ভর্তি করাইয়া দিব। কোচিংয়ের ভাইয়াদের আদেশ মান্য করিলেই সে বিবিএ পড়ার গৌরব অর্জন করিবে।’
সেই হইতে ‘কবে যাব কখন যাব’ করিয়া ফটিক তাহার মামাকে অস্থির করিয়া তুলিল। উৎসাহে তাহার রাত্রে নিদ্রা হয় না। কখন যে ‘ট্রাভেলিং টু ঢাকা’ স্ট্যাটাস দিবে!
৩.
ফটিক মামার সহিত ঢাকায় আসিয়া কোচিং সেন্টারে ভর্তি হইল। কোচিংয়ের ভাইয়ার লেকচার মন্ত্রমুগ্ধ হইয়া শুনিল। ভাইয়া কহিলেন, ‘শোনো, তোমাদিগের হাতে দুইখানা অপশন। চার মাস পরিশ্রম করিবে নাকি চার বছর? এই চার মাস পরিশ্রম করিয়া মনোযোগসহকারে পড়ালেখা করো। দেখিবে, আগামী চার বছর রাজার হালে থাকিতে পারিবে। কোনো কষ্ট করিতে হইবে না। জাস্ট পরীক্ষার আগের রাতে শিট ফটোকপি করিয়া পরীক্ষায় বসিবে। বাকি সময় তোমার। আড্ডা-গান-মাস্তিতে ভরপুর জিংগালালা লাইফ।’
ফটিকের চোখে রঙিন ভবিষ্যতের স্বপ্ন। যেকোনো মূল্যে তাহাকে চান্স পাইতেই হইবে। তাই দরজা-জানালা বন্ধ করিয়া পড়ালেখায় মনোনিবেশ করিল। লাগিয়া থাকিলে কী না হয়! অবশেষে সে সত্যি সত্যিই বিবিএতে চান্স পাইয়া গেল। ফটিক ‘ইয়ো ব্রো, আই মেড ইট। ডিয়ার বিবিএ, আই অ্যাম কামিং টু উইন ইউ!’ ক্যাপশন লিখিয়া ফেসবুকে একখানা সেলফি আপলোড করিল।
৪.
এক মাস ক্লাস করিতে না করিতেই ফটিকের মাথায় হাত। স্যার কহিলেন, ‘আগামী সপ্তাহে তোমাদিগের ফার্স্ট মিড।’
এ কেমন বিচার! এমন তো কথা ছিল না! আরও কয়েক দিন যাওয়ার পর ফটিক বুঝিতে পারিল, উহা ট্রেইলার ছিল। ঘটনা এখনো আরম্ভই হয় নাই। এক ক্লাসে ফার্স্ট মিডের ঘোষণা আসে তো পরের ক্লাসে অ্যাসাইনমেন্ট। তারপরের ক্লাসে প্রেজেন্টেশন। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো দেয় সারপ্রাইজ অফার আর টিচাররা দেন সারপ্রাইজ টেস্ট! এবং ফটিক আরও আশ্চর্য হইল, যখন শুনিল যে ক্লাসে উপস্থিতির উপরও নম্বর আছে! অথচ সে শুনিয়াছিল, ভার্সিটিতে নাকি ক্লাসই করিতে হয় না।
মিডটার্ম, অ্যাসাইনমেন্ট এবং প্রেজেন্টেশনের প্যারায় ফটিক ধরাশায়ী। মিডটার্মের সিলেবাস এত বড় হইতে পারে, তাহা সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না।
এক কোর্সের মিডটার্মের জন্য সারারাত পড়ালেখা করিল ফটিক। সকালে বুঝিতে পারিল, তাহার শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়া গিয়াছে। অর্থাৎ জ্বর আসিয়াছে। স্যারের নিকট গিয়া ফটিক কহিল, ‘স্যার, জ্বর আসিয়াছে।’
স্যার কহিলেন, ‘ও কোনো ব্যাপার নহে। ভার্সিটিতে পরীক্ষার দিন সকালে এমনিতে শরীর গরম গরম অনুভূত হইয়া থাকে। পরীক্ষায় বসো। সারিয়া উঠিবে।’
৫.
স্যুটেড-বুটেড হয়ে প্রেজেন্টেশন দেওয়া, মিডটার্ম আর হাজারো অ্যাসাইনমেন্টের ভিড়ে ফটিকের মুক্ত হৃদয় আবদ্ধ হইয়া পড়িল। তাহার খুব করিয়া গ্রাম আর মায়ের কথা মনে পড়িল। আর ভাবিতে লাগিল, কবে ছুটি হইবে। ‘কবে ছুটি হবে’ স্ট্যাটাস দিয়া সে ফেসবুক ভরাইয়া ফেলিল। তাহার ছুটি চাই–ই চাই। তাহার মাকে দেখিতে যাইতেই হইবে।
অবশেষে ফটিক বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ পাইল। করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। ক্লাসও হইবে না। প্রথম সপ্তাহে ফটিক পাঙ্খা হইয়া গেল। ঘুম, খাওয়াদাওয়া আর ফেসবুকিং করিয়া সময় বেশ কাটিতে লাগিল। তবে একটাই সমস্যা, বাড়ির বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নাই। চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী। এইভাবে কয়েক দিন কাটিয়া গেলে ফটিক উসখুস করিতে শুরু করিল। তাহার আর কিছু ভালো লাগে না। এত সুখ, এত আরাম যেন বিষ! চুল–দাড়ি রবীন্দ্রনাথের মতো হইয়া যাইতেছে। বাড়িতে আর তাহার কিছুতেই মন বসে না। শুইয়া-বসিয়া থাকিতে থাকিতে মনে হইতেছে, তাহার পায়ে শিকড় গজাইয়া যাইতেছে। নিজের মাথাটা নিজেই ফাটাইয়া ফেলিতে মন চাইতেছে। নেট কিনিতে কিনিতে তাহার জমানো টাকাপয়সাও সব শেষ হইয়া গেল। ফটিকের মনে হইতেছে, করোনা হওয়া লাগিবে না, সে এমনিতেই শ্বাস বন্ধ হইয়া মৃত্যুবরণ করিবে।
৬.
মাঝেমধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলিবার ঘোষণা আসে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলিবার সময় নিকটে আসিলে করোনার সংক্রমণ বাড়িয়া যায়। সংক্রমণ খানিকটা কমিয়া যায়, আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলিবার ঘোষণা আসে। আবার সংক্রমণ বাড়িয়া যায়। এই চক্র হইতে কি সে বাহির হইতে পারিবে না? করোনা কি জনৈক মাসুদের মতো; যে আর কোনোদিনও ভালো হইবে না বলিয়া পণ করিয়াছে?
এইসব ভাবিতে ভাবিতে ফটিক একদিন মাথা ঘুরিয়া পড়িয়া গেল। ফটিকের মা ঝড়ের বেগে ঘরে প্রবেশ করিলেন। ফটিকের শিয়রে বসিয়া ডাকিলেন, ‘ও রে ফটিক, বাপধন রে!’
ফটিক কাহাকেও লক্ষ না করিয়া বিড়বিড় করিয়া প্রলাপ বকিতে লাগিল, ‘হ্যালো এভরিওয়ান, গুড মর্নিং...ইটস মি, ফটিক চক্রবর্তী, বিয়ারিং আইডি ৩৬...প্রেজেন্টিং...অ্যাঁ...মা, ভার্সিটির ছুটি কবে শেষ হইবে, মা? আমি ভার্সিটিতে যাইব, মা...!’
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ গল্প অবলম্বনে
 saving score / loading statistics ...
 saving score / loading statistics ...