eng
competition

Text Practice Mode

পাগল ছারাকি আর হবে

created Jul 30th 2019, 17:42 by MDMridulHasan


0


Rating

751 words
8 completed
00:00
পাগল শব্দটি বড়ই মজার। তিন অক্ষরের শব্দের অভিব্যক্তি বহু বিচিত্র। এটি যেমন ব্যক্তির মানবিক অস্তিত্বের এক বিপর্যস্ত অবস্থাকে নির্দেশ করে থাকে অর্থাৎ যার মাথাটি ফাঁকা তাকে যেমন বুঝায় তেমন যার মাথায় সাধারণের তুলনায় মাল-মশলা একটু বেশি তাদেরকেও বুঝায়। অনেক সৃষ্টিশীল খেয়ালি মানুষ শব্দকে নামের আগে খেতাব হিসেবে ব্যবহার করে নিজেকে প্রকাশ করেন। কখনো অপমানজনক গালি হিসেবে এর ব্যবহার হয় আবার শব্দ দিয়ে পরম মমতারও প্রকাশ ঘটে। কথনে লেখনে সমাজে সাহিত্যে শব্দের ব্যাপক উপস্থিতি। জন্মদাত্রী মায়ের কাছে প্রতিটি সন্তানই পাগল। আমার ‘পাগল ছেলে’ বলে প্রত্যেক মা নিজ সন্তানের প্রতি তার শ্রেষ্ঠতম সোহাগটি দান করেন। প্রায় সব বাঙ্গালীই প্রথমবারের মত পাগল খেতাবটি অর্জন করে স্নেহময়ী মায়ের কাছ থেকে। আবার সেই নারীই যখন স্বামী বেচারার বিশেষ একটি সখ বা নেশার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন-লোকটা বয়সেও যাত্রা নাটকের জন্য পাগল’ তখনও পাগল শব্দটির ব্যঞ্জনা অন্য রকম হয়। এরকম ‘গানের পাগল’ ‘বইয়ের পাগল’ সখের বা অর্থের পাগলে সমাজটিই পরিপূর্ণ। সোহাগে আদরেও প্রিয়তমা পত্নীর মানভঞ্জন করতে না পেরে যখন বলে-আহা,পাগলামি করোনাতো তখন পাগলামির আরেক মাত্রা প্রকাশ করে। আবার স্বামীর খুনসুটিতে বিগলিত স্ত্রী যখন বলে-কী পাগলামি শুরু করেছ’ তখন তা হয়ে ওঠে পাগলামির উষ্ণতম এক প্রকাশ। মান্না দে যখন গান ‘তুমি যখন পাগল বলো ধন্য যে হয় সে পাগলামি’ তখন আক্ষরিক অর্থেই সেই পাগলামি রোমান্টিকতার এক অনন্য দ্যোতনা পেয়ে যায়। দিলরুবা খানের ‘পাগল মন’তো এক সময় সকল সঙ্গীত পাগলকেই পাগল করে ছেড়েছিল। লাইলী প্রেমে মজনু পাগল শিরী প্রেমে ফরহাদ পাগল আর নর নারীর পরস্পরের প্রেমে পাগল হওয়ার আকুতি আর আবেগ নিয়ে কত গাঁথা কাহিনী গল্প উপন্যাস কাব্য মহাকাব্য গান রচিত হয়েছে তার পরিসংখ্যান দেয়া কি সম্ভব ? নর নারীর এই পাগলামি হলো ভাবের কিন্তু এই ভাবের পাগল বাস্তব পাগলে রূপান্তরিত হওয়ার নজীরও অনেক। স্কুলজীবনে আমার এক সুন্দরী সহপাঠিনীর প্রেমে পড়েছিলেন এক মেধাবী সিনিওর ভাই। প্রাইভেট পড়ানো থেকে শুরু। দিনে দিনে মেধাবী মানুষটির অন্তরে এই প্রেম মহীরুহ হয়ে ওঠে কিন্তু সহপাঠিনীর বিয়ে হয়ে যায় এক পুলিশ কর্মকর্তার সাথে। কেচ্ছাকাহিনীর মজনুকে দেখেছিলাম এই বড় ভাইয়ের কাছে। তার পড়ালেখা গেল। সম্ভাবনাময় ভবিষ্যত গেল। সমাজ সংসার ভেসে গেল। দেখতাম তসবি জপের মতো তিনি অনবরত সেই প্রেমিকার নাম জপছেন।এই জপতপ করতে করতেই একদিন তিনি ভবলীলা সাঙ্গ করলেন। শরৎচন্দ্রের ‘দেবদাস’ও এক সময় পাগলের চূড়ান্ত পর্যায়েই চলে গিয়েছিল। আর এই পাগলামি যদি উন্মত্ততার পর্যায়ে চলে যায় তখন আরেক বিপদ।তার জলজ্যান্ত প্রমাণ সিলেটের খাদিজার উপর প্রেমিক বদরুলের বেপরোয়া হামলা।সকল বাউল কবিই স্বঘোষিত পাগল।নামের আগে পাগল ভনিতাটি না বসাতে পারলে তাদের বাউল পরিচয়টিই যেন অপূর্ণ থেকে যায়।‘পাগল অমুক বলে’ বাউল গানের এক অতি পরিচিত ভনিতা। উনবিংশ শতকের এক প্রখ্যাত লোককবি কানাই সেখ নাম ধারণ করেন পাগলা কানাই। অষ্টাদশ উনবিংশ শতকে ময়মনসিংহের শেরপুর অঞ্চলে টিপু পাগলা ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে পাগলপন্থী আন্দোলনের সূচনা করেন। অবশ্য গূঢ় বা নিগূঢ় পাগলের কথা আলাদা ‘তিন পাগলে হল মেলা নদে এসে’এর ভাবার্থ জানেন লালন সাইজী।‘হাছন রাজা হইল পাগল লোকের হইল জানা’ বললেও আমরা কি আসলেই জানি তার পাগলামির রহস্য? ‘শহরে এসেছে এক নতুন পাগল’ প্রয়াত সঞ্জীব চৌধুরীর সেই পাগল আমাদের সবার মাঝেই বসবাস করে। উচ্ছ্বল প্রাণবন্ত আমুদে সরস মানুষকে আদর করে বলা হয় পাগলা। সিলেটের বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তেমনি এক  ছাত্র সুমন দাস নিহত হয়েছিল ছাত্রলীগের আন্তঃকোন্দলে সেই ছেলেটি সবার কাছে পরিচিত ছিল সুমন পাগলা বলে। আধুনিক তুরস্কের জন্মদাতা কামাল পাশার কর্মকান্ডে উচ্ছ্বসিত নজরুলতো তাঁর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে গিয়ে ‘কামাল পাশা’ কবিতায় লিখলেন-“ঐ ক্ষেপেছে পাগলী মায়ের দামাল ছেলে কামাল ভাই”। আবার বিভিন্ন পশুর ক্ষেত্রে পাগলা শব্দটি যথার্থই ক্ষ্যাপা অর্থে ব্যবহৃত হয় যেমন ‘পাগলা কুত্তা’। আমাদের সমাজে কাউকে পাগলা কুত্তা বলা এক জবরদস্ত গালি কিন্তু অনেক দেশে শব্দটিকে বীরত্বসূচক বলেই গণ্য করা হয় যেমন মার্কিন জেনারেল জেমস মেটিস যিনি মেডডগ নামে খ্যাত। আবার রূপক অর্থে মনকে অনেক সময় ‘পাগলা ঘোড়া’র সাথে তুলনা করা হয়  যেমন ‘আমার পাগলা ঘোড়ারে কইর মানুষ কই লইয়া যাও’। প্রতিভাবান খেয়ালী মানুষের সৃষ্টিশীল কর্মকান্ডও সাধারণের কাছে ‘পাগলামি’ বলেই পরিচিতি পায়। জুলভার্নের ক্যাপ্টেন নিমো সত্যজিৎ রায়ের প্রফেসর শংকু বা হুমায়ুন আহমদের মিসির আলীও এক ধরণের পাগল বলেই সাধারণ্যে আদৃত।প্রয়াত অভিনেতা খালেদ খানের অনবদ্য অভিনয়ে যে চরিত্রটি আমাদের মনে অম্লান অক্ষয় হয়ে আছে রক্তকরবীর সেই বিশুও অন্যদের কাছে বিশু পাগলা বলেই খ্যাত ছিল। অফিসের বড় সাহেব নিজেতো ঘুষ খানই না অন্য ঘুষখুরের জন্যও যমস্বরূপ,সাধারণ্যে তিনিও পাগল।এ পাগলেরও অন্য রকম মাহাত্য।যাত্রাগানে রাজা বাদশা বা খল নায়কদের অন্যায় অপকর্মের বিরুদ্ধে যে চরিত্রটি গানে গানে অপ্রিয় সত্যগুলো বলে যায় তার নাম বিবেক,এই বিবেকও পাগল।আর এদেরকে ‘দূর বনের পাগল’ বলে মঞ্চ থেকে তাড়িয়ে দেয়াই যাত্রাপালার চিরাচরিত রীতি।
 
এতো গেল মানুষের কথা। প্রকৃতিতেও অনেক সময় পাগলামির লক্ষণ দেখা যায় কিন্তু সেই পাগলামিকে ধরতেও খেয়ালি বা পাগল চোখ আর অনুভূতির প্রয়োজন।‘পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে পাগল মন কেমন করে’ সাদামাটা মাথায় কি খেলতে পারে? আর ‘পাগলা হাওয়ার তরে মাটির প্রদীপ নিভু নিভু করে’ হাওয়ার এমন উন্মত্ত পাগলামিকে বাঙময় করতে জেমসের মতো পাগলা কন্ঠ না হলে কি চলে?
 
 

saving score / loading statistics ...